পাবনার উৎপাদন এলাকায় দাম বাড়ছে পেঁয়াজের
পাবনার সুজানগর ও সাঁথিয়া উপজেলায় পেঁয়াজের দাম বাড়তে শুরু করেছে। গত বুধবার দুই উপজেলার বিভিন্ন হাটে পাইকারিতে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল ৬০-৭০ টাকায়। আজ শনিবার সাঁথিয়া উপজেলার করমজা চতুর হাটসহ বিভিন্ন হাটে সেই পেঁয়াজ ৭৫-৮৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আগাম পেঁয়াজের উৎপাদন শেষ হয়ে আসার কারণে গত তিন দিনে পাবনার উৎপাদন এলাকায় পেঁয়াজের দাম বেড়েছে প্রতি কেজিতে ১৫ টাকা।
কৃষক ও পেঁয়াজ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাজারে এখন আগাম বা মুড়িকাটা জাতের পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। মাসদেড়েক আগে এই পেঁয়াজ হাটে উঠেছে। সুজানগর ও সাঁথিয়া উপজেলায় কৃষকেরা যে মুড়িকাটা জাতের পেঁয়াজের আবাদ করেছিলেন, তার বেশির ভাগই ইতিমধ্যে তোলা হয়েছে। এর ফলে বাজারে এই জাতের পেঁয়াজের সরবরাহ কমতে শুরু করেছে। ফলে বাড়ছে মুড়িকাটা পেঁয়াজের দাম।
তবে কৃষকেরা জানিয়েছেন, মাসখানেকের মধ্যেই প্রধান জাত হালিকাটা পেঁয়াজ বাজারে উঠতে শুরু করবে। তখন পেঁয়াজের দাম আবার কমে আসবে।
দেশে পেঁয়াজের অন্যতম উৎপাদনস্থল হিসেবে পাবনার সুজানগর ও সাঁথিয়া উপজেলা সুপরিচিত। সাঁথিয়া উপজেলায় এবার ১ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে আগাম বা মুড়িকাটা জাতের পেঁয়াজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। আর হালি পেঁয়াজের হবে সাড়ে ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে। অন্যদিকে সুজানগর উপজেলায় ১ হাজার ৫৭০ হেক্টর জমিতে মুড়িকাটা ও ১৭ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে হালি জাতের পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দুই উপজেলাতেই বেশির ভাগ মুড়িকাটা জাতের পেঁয়াজ কৃষকের ঘরে উঠে গেছে। সাঁথিয়া উপজেলায় ১ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে আবাদ করা মুড়িকাটা পেঁয়াজের মধ্যে ১ হাজার ২৫৫ হেক্টর জমির পেঁয়াজ উঠে গেছে। আর সুজানগর উপজেলায় ১ হাজার ৫৭০ হেক্টর জমিতে আবাদ করা মুড়িকাটা পেঁয়াজের মধ্যে দেড় হাজার হেক্টর জমির পেঁয়াজ উঠে গেছে। ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যেই দুই উপজেলার সব মুড়িকাটা পেঁয়াজ কৃষকের ঘরে উঠে যাবে বলে উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে।
করমজা চতুর হাটের সবচেয়ে বড় পেঁয়াজের আড়ত মুন্নাফ ট্রেডার্সের মালিক আবদুল মুন্নাফ প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত হাটের (মঙ্গলবার) চাইতে আজকের হাটে (শনিবার) পেঁয়াজ আসা বেশ কমেছে। দামও গত হাটের চাইতে আজ কেজিতে ১৫ টাকার মতো বেশি। আসলে মুড়িকাটা একেবারে শেষ পর্যায়ে। হালি পেঁয়াজ না ওঠা পর্যন্ত পেঁয়াজের দাম কমার খুব একটা আশা দেখছি না।’
সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) আজকের বাজারদর অনুযায়ী, ঢাকার বাজারে নতুন দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৭৫-৯০ টাকায়। এক সপ্তাহ আগে এই পেঁয়াজের দাম ছিল ৭০ থেকে ৮০ টাকা। টিসিবির হিসাবেই গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে ঢাকার বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ১০ শতাংশ।
পাবনার কৃষকেরা জানান, সাধারণত ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে মুড়িকাটা জাতের পেঁয়াজ কৃষকের ঘরে উঠতে শুরু হয়। চলে জানুয়ারি মাসজুড়ে। মুড়িকাটা পেঁয়াজ ওঠা শেষ হওয়ার মাসখানেকের মধ্যেই ওঠা শুরু করে হালি জাতের পেঁয়াজ। গত তিন-চার বছর ধরে মুড়িকাটা জাতের পেঁয়াজ আবাদে লোকসানের কথা বলে আসছিলেন কৃষকেরা। তাঁদের দাবি, গত বছর নতুন পেঁয়াজ হাটে তুলে ২০-২৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে হয়েছিল। তখন উৎপাদন খরচ ছিল কেজিতে ৩০ টাকার মতো।
চলতি মৌসুমে মুড়িকাটা পেঁয়াজ উৎপাদনে খরচ পড়েছে কেজিতে ৩৩-৩৫ টাকা। তাতে গতবারের চেয়ে এবার উৎপাদন খরচ বেশ বেড়েছে। তবে এবার কৃষকেরা পেঁয়াজ বিক্রি করে ভালো মুনাফা করেছেন। পাইকারিতে ৭৫-৮৫ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি করার কারণে কৃষকের লাভ হচ্ছে ৪০-৫০ টাকা। লাভের পরিমাণ ভালো হওয়ায় দুই উপজেলার পেঁয়াজচাষিদের মুখে এবার হাসি।
সাঁথিয়ার করমজা চতুর হাটে পেঁয়াজ নিয়ে আসা শহীদনগর গ্রামের পেঁয়াজচাষি আবদুল বারেক প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত দুই বছরে লোকসান হওয়ায় এবার ভয়ে মাত্র এক বিঘা জমিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজের আবাদ করে ৬০ মণের মতো ফলন পেয়েছি। ভালো লাভও হয়েছে। আগে বুঝতে পারলে আরও বেশি জমিতে পেঁয়াজ চাষ করতাম।’
সুজানগর ও সাঁথিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সূত্রে জানা যায়, আগামী ১০ দিনের মধ্যে মুড়িকাটা জাতের সব পেঁয়াজ তোলা হয়ে যাবে। সেই পেঁয়াজে অন্তত মাসখানেক চলবে। এরপর ফেব্রুয়ারির শেষ বা মার্চের প্রথম সপ্তাহে হালি পেঁয়াজ ওঠা শুরু হবে। এটাই প্রধান পেঁয়াজ। এ জাতের পেঁয়াজ দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায়। হালি পেঁয়াজ বাজারে উঠলে দামও কমে যাবে বলে মনে করেন সাঁথিয়া ও সুজানগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রাফিউল ইসলাম ও সঞ্জীব কুমার গোস্বামী।

No Comments yet! Be the first to comment. 😊